***** আসসালামু আলাইকুম ***** ***** আজ পবিত্র হজ্ব ***** ***** লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক্’। অর্থাৎ—‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই ধ্বনিতে আজ মুখর হবে আরাফাতের ময়দান। তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজ্বী ) আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন। মসজিদে নামিরাহ থেকে হজ্বের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরাফাত ময়দানে অবস্থানের যে দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, তাতে এই খুতবা এবং নামাজ দেখানো হয়। হজ্ব ভিসা নিয়ে যাঁরা সৌদি আরবে গিয়ে অসুস্থ্যতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হবে। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজ্বের অন্যতম ফরজ। পবিত্র হজ্ব পালন করতে গত বুধবার সারা বিশ্বের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান কেউ গাড়িতে বা হেঁটে মিনায় পৌঁছান। ভাষা, বর্ণ ও লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশের ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতি বছর হজ্ব পালনের লক্ষ্যে মিনা থেকে আরাফাতে গমন করেন। মূলত ৯ জিলহজ্ব আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ্ব । ‘হজ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ্ব । বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশ থেকে এবার প্রায় ২০ লাখ মুসল্লী হজ্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ৯৮ হাজারের বেশি হাজ্বী । আরাফাহ ও আরাফাত—এই দুটো শব্দই আরবীতে প্রচলিত। দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থে ও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড় বেষ্টিত। ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই সড়কের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কুরআ বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে মসজিদে নামিরায় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষ হয়েছে। এই ময়দানে ৯ জিলহজ্ব হজ্ব যাত্রীরা ‘অকুকে আরাফাহ’ করেন, অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থান করেন। জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো, রহমতের পাহাড়। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি করা আছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজ্বের ভাষণ দিয়েছিলেন। আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সায়ি’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট ) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন। যাঁরা হজ্বের আগে মদিনায় যাননি, তাঁরা মদিনায় যাবেন। সৌদি হজ্ব মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয় সূত্র জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজ্বীকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজ্বীদের নানা উপহার দিচ্ছে। সকাল থেকে সারা দিন হেলিকপ্টার মিনার চারপাশ টহল দেয়। জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজ্বীদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। তাঁরা কাল কোরবানি দেবেন। অধিকাংশ হাজ্বী নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে (আইডিবি) ৪৯০ রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন। পবিত্র হজ্ব পালন করতে এসে এ পর্যন্ত ৩৫ জন বাংলাদেশি ইন্তেকাল করেছেন। বাংলাদেশের সব হাজ্বী সুস্থ আছেন। হজ্বের পাঁচ দিন মিনায় ৬-৫৬ নম্বর তাঁবুতে, বাংলাদেশ হজ্ব কার্যালয়ের কার্যক্রম চলবে। প্রতিদিন হাজ্বীদের ছবি, মৃত হাজির তালিকা ও বুলেটিনে তথ্য হালনাগাদ করা হয় www.hajj.gov.bd. এই ঠিকানায়। আজ কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে: আরবরা কাবাকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতিবছর (৯ জিলহজ্ব) হজ্বের দিন হাজ্বীরা সব আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়। *****




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সম্মানে ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট জনাব মো: আব্দুল হামিদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া...